পরিচালক ও তার সৃষ্টি

১৬তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশে ৪০ দেশের ১০১টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। উৎসবের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে জমা পড়েছে সারাবিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন মান ও ধরণের শিশুতোষ চলচ্চিত্র। শিশুতোষ চলচ্চিত্র হিসেবে অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের আধিক্যও চোখে পড়ার মতো।

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগের চলচ্চিত্রগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশী নির্মাতাদের তৈরি বেশ কয়েকটি ছবি। এই ছবিগুলোর কয়েকটি ছবির নির্মাতাদের সাথে কথা হলো তার নির্মাণের পেছনের গল্প নিয়ে।

 

আবু রায়হান জুয়েল নির্মিত শিশুতোষ থ্রিলার ছবি ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ সুন্দরবন (২০২৩)’

ছোটবেলা থেকে জাফর ইকবালের বই পড়তে ভালোবাসি। জীবনে হাজারোবার তার লেখা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি। ঠিক তেমনি, আবু রাইহান ও মোহাম্মদ জাফর ইকবালের বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করেছেন “অ্যাডভেঞ্চার অফ সুন্দরবন”। সারা বিশ্ব যখন করোনা মহামারীতে আক্রান্ত, তখন তাদের লঞ্চে সব কিছু উপেক্ষা করে জড়ো হয়েছিল নানা বয়সী শিশু, কিশোর, চলেছে শুটিং। নানা ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে, অনেক অপেক্ষার ও সাধনার ফসল এই চলচ্চিত্র।

শুটিংশেষে কোয়ারেন্টাইনের কারণে ঢাকায় ঢোকার অনুমতিও পাচ্ছিলেন না তারা। এই চলচ্চিত্র মূলত তুলে ধরেছে শিশুদের মধ্যে বিরাজমান সামাজিক বৈষম্য। আবু রাইহান তার ছবির মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন আমরা যে যেখানেই জন্মাই না কেন আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা মানুষ।তাই বিপদে আপদে সবার পাশে দাঁড়ানো ভেদাভেদ ভুলে আমাদের একান্ত দ্বায়িত্ব।এই অসাধারণ বার্তাটাই আমাদের দিয়েছেন আবু রায়হান।

 

শৈশবের গল্প নিয়ে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান নির্মিত ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ (২০২৩)

ছোটবেলার গল্পগুলো যেন চিররঙিন । এই দুরন্ত অতীতের মাঝে নুরুজ্জমান খুজে পান তার ছবি, “আমকাঠালের ছুটি”। সম্পুর্ণ নতুন এক দল শিল্পী নিয়ে তৈরি হয়েছে এই সিনেমা। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির বাইরে যে সহজ সরল জীবনটা রয়েছে তাকে কেন্দ্র করে এই ছবি। যেখানে মন খারাপ হলে বোকা বাক্সে নয়, নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। যেখানে সুযোগ পেলেই তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীর গল্প শোনা যায়। এখানে আম কাঠালের দিনে ছুটি হয়ে যায় সবার।

ছোটবেলায় গ্রীষ্মের ছুটিতে আমাদের শহরবন্দী সময় মুক্তি পেতো দাদুবাড়িতে আমকাঠালের নিমন্ত্রণে। কঠোর রোদে দৌড়ে বেড়ানো, ঝড় বৃস্টি উপেক্ষা করে আম কুড়ানো। বড় হতে হতে বাড়ছে ব্যস্ততা। দিন দিন যেন ফোনে মুখ গুজে থাকাটাই আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। মোহাম্মদ নুরুজ্জামান আমাদের ফিরিয়ে নিতে চেয়েছেন আমাদের সোনালী সময়ে।

  

 

উম্মে হাবিবা এবং জয়ন্ত রায় নির্মিত থ্রিডি ছবি ‘নিরন্তর (২০২২)’

“মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই”।

মার কথা যদি লিখি সবসময়ই তা যেন খানিকটা কম হয়ে যায়। তবু প্রকৃতির নিয়ম মেনে একদিন মার কোল ছেড়ে রাস্তায় নামতে হয়। নিজেকে নিজের মতো গড়ে নেবার সময় আসে। আমরাও বড় হই, আমাদের সংসার, ছেলেমেয়ে নিয়ে শুরু হয় নতুন পরিবার। একসময় আমাদের বাবা মা, তাদের স্মৃতিগুলো রেখে হারিয়ে যান অনন্তলোকে। যেভাবে আমাদেরও একদিন ছেড়ে যেতে হবে এই নশ্বর পৃথিবী। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই আমাদের জীবন এ অমোঘ চক্রে বাধা। ঠিক এই বিষয়টা নিয়ে তৈরি animation film “নিরন্তর” । শুটিং এর পুরো ব্যাপারটাই এখানে ল্যাপ্টপে বন্দী। জীবনের বাস্তবতায় বড় হয়ে আমরা কেউ কর্মসুত্রে যাই অন্য জেলায়, কেউ বা বিদেশ। বাড়িতে অপেক্ষায় থেকে যান বাবা মা। এই কঠোর সত্যটা মানুষের কাছে পৌছে দিতে চেয়েছেন উম্মে হাবিবা এবং জয়ন্ত রায়।

 

– মীর উমাইমা হক পদ্ম

0 Comments

Leave a reply

© 2023 Children's Film Society Bangladesh

This website is designed & supported by Hootum Bangladesh Limited

Log in with your credentials

Forgot your details?