আমাদের চলচ্চিত্র উৎসবে…
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে ছোটাছুটি করছে৷ গলায় আবার একটা আইডি কার্ডও ঝোলানো আছে,আমাকে দেখেই একটা মেয়ে ছুটে এসে মিষ্টি মেয়ে দুষ্ট হাসি হেসে বলল,’ভাইয়া, কিছু লাগলে আমাকে জানাবেন!’ এভাবেই প্রথম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ক্ষুদে ভলান্টিয়াররা দায়িত্ব পালনের চেয়ে আনন্দ উৎসবেই মেতে ছিল বেশি।এত ছেলেমেয়েরা চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে ছুটে এসেছে দেখলে অবাক হতে হয়।
শুরু হল যেভাবে
‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামীর স্বপ্ন’ স্লোগান নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় শুরু হয় ১ম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন শিশু ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, তথ্যসচিব জামিল ওসমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবে মোট ৩৭টি দেশের ১৩৫ টি চলচ্চিত্র দেখানো হয়। মূল উৎসব কেন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তন ছাড়াও পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার হল, জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রুশ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেও চলে এই উৎসব।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে
ছোটদের বন্ধু মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বেশ মজার মজার কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে কাছে পেয়েই শুরু হয়েছিল জমজমাট আড্ডা৷ ছবি আর অটোগ্রাফের জন্য পড়েছিল দীর্ঘ লাইন। ১ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সেমিনার হলও তিনি জমিয়ে তুলেছিলেন। ‘ছোটদের সিনেমা হয় না কেন?’ ‘মেয়েদের নিয়ে উপন্যাস লেখেন না কেন?’ ‘আমার বন্ধু রাশেদে রাশেদকে মেরে ফেললেন কেন?’ প্রভৃতি প্রশ্নে জর্জরিত জাফর ইকবাল খুব সুন্দর করে জবাব দেন শিশুদের।
উৎসবে নতুন বন্ধু
উৎসবে আগত শিশুরা অনেক আগেই সৃষ্টি করে নিয়েছিল বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন। তাকে আরো শক্তিশালী করতে ৩১ জানুয়ারি এক মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, ছোট ছোট দুষ্টুমি দিয়ে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্বেচ্ছায় গান গেয়ে, কবিতা আবৃত্তি করে তারা স্বীয় প্রতিভার সাক্ষ্য রাখে। রাখাইন সম্প্রদায়ের ছেলে চেন চেন নু বোনের বিয়ে রেখে উৎসবে ছুটে এসেছে। অর্ণব চাকমাও অনেকের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলেছে।
কোনটা রেখে কোনটা দেখি
১৩৫ টি ভালো মানের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে উৎসবে। সেমিনার হলে হয়ত শুরু হয়েছে ‘সোনার কেল্লা’, শওকত ওসমানে চলছে ‘হোয়্যার ইজ মাই ফ্রেন্ড’স হাউজ’। অনেককে দেখা যাচ্ছে ছোটাছুটি করে দুটোই দেখছে সিনেমা। এক মাকে দেখা গেল ভীষণ বিপাকে, মেয়ের কর্মশালা শেষ হয়নি, আবার ছেলেরটা শুরু। কোথায় বসবেন!
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে
”ছবি আঁকার নিয়ম বলব এখন, সবাই সাবধান! খাতা-কলম বের কর!” এভাবে জমিয়ে তুললেন মুস্তাফা মনোয়ার। ছবি আঁকার সবচেয়ে বড় নিয়ম হচ্ছে, কোন নিয়ম নেই। সবাই হাসিতে ফেটে পড়ল। সুন্দরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, সুন্দর হচ্ছে নিয়ম মেনে একঘেয়ে।
অধ্যাপক আআব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ও অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকে কাছে পেয়েও প্রশ্নের ডালি খুলে বসল শিশুরা। চট্টগ্রামের একজন তো বলেই ফেলেছিল ‘ওরে কত্ত হাসি হাসায় রে!’ শেষ দিন সুলতানা কামালও বেশ বন্ধু বনে গিয়েছিলেন সবার সাথে।
আমরাও ছবি বানাব
ছোট ছোট বন্ধুরাও বারবার দৃঢ় কন্ঠে বলতে লাগল, ‘আমরাও ছবি বানাব! আপনারা কি আমাদের সহায়তা করবেন?’ ক্যাথরিন মাসুদ প্রশ্নের জবাবে জানালেন ‘হ্যাঁ অবশ্যই’। খুব সুন্দর বাংলা বলেন তিনি৷ ‘মাটির ময়না’র মত চমৎকার চলচ্চিত্র তিনি উপহার দিয়েছেন। উৎসব পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম ভাল ও খারাপ ছবির পার্থক্য তুলে ধরেন। ছবি নির্মাণের কিছু গোপন তথ্য তিনি ফাঁস করে দেন।
সাথে ছিল যারা
এক অদৃশ্য জরিপে দেখা গেছে মেলায় সবচেয়ে বেশিবার খোঁজ করা হয়েছে শিশু প্রতিনিধি সমন্বয়কারী শ্রাবণী সমাদ্দারকে। শিশু প্রতিনিধিদের প্রতিটি কাজে তিনি বন্ধুর মত সাথে ছিলেন। আরো ছিলেন শেখ সাজিদ, সৈয়দা নিগার বানু, ফজলে রাব্বী, জিন্নাতূন নূর সিনথিয়া প্রমুখ। প্রতিদিন শিশুদের হাতে যে বুলেটিন তুলে দেওয়া হত তার দায়িত্বে ছিলেন পথিক সুমন।
মন নাহি যেতে চায়
উৎসব শেষ হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয় ১লা ফেব্রুয়ারি। দূরের অনেক বন্ধু তাই আগে আগেই ফিরে যায় নিজ জেলায়। যারা ছিল তারা বেশ আমোদ করেই চলচ্চিত্র উপভোগ করেন শেষ দিন পর্যন্ত। সবার মুখে ছিল উৎসব লোগো। প্রতিবছর এমন উৎসব আয়োজন করা দরকার।
(সংক্ষেপিত)