CFS কি, কবে হলো, কি হয়, আমরা কিভাবে যুক্ত হলাম, কাদের সান্নিধ্য পেলাম, স্বপ্নপূরণ, প্রাপ্তি এসব কিছু নিয়েই ইতোমধ্যে লেখা হয়েছে। বহুবার এসেছে বিষয়গুলি। আমি বরং একটু ভিন্ন কিছু নিয়ে লেখার চেষ্টা করি।

CFS একটি পরিবারের নাম। যেই পরিবারে বাস করে স্থায়ী এবং অতিথি এই দুই ধরনের সদস্য। যারা চলচ্চিত্র কর্মী, ছবি বানাবে, এর পিছনে অহেতুক সময় নষ্ট করবে (অভিভাবকদের মতে)তারা এখানকার সাদর আমন্ত্রিত এবং স্থায়ী সদস্য। আর যারা খন্ডকালিন একটা অভিজ্ঞতা নিতে আসবে, গুণী গুণী মানুষগুলোকে কাছে থেকে দেখবে, তাদের উপদেশ শুনবে, সেলফি তুলবে, অটোগ্রাফ নেবে (যদিও এটি এখন মৃতপ্রায়, সেলফিটাই মার্কেটে বেশি চলতেছে) তারা অতিথি। তারাও সমান আদরে আমন্ত্রিত। যে যাই হোক যেমনই হোক, আমরা সবাই এই পরিবারে এসেছি ব্যক্তিগত ভালোবাসা থেকে, বিশেষ রকমের এক ভালোলাগা নিয়ে।

CFS এর একটি লক্ষ্য আছে, উদ্দেশ্য আছে। প্রতি বছরের শুরুতে একটি উৎসব করে আনন্দ করাই CFS এর উদ্দেশ্য না। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে এমনও বলতে শুনেছি- আমরা নাকি এসব করে একটা মোটা অংকের ব্যবসা করি! Can you imagine?? উৎসব নামাতে গিয়ে নিজের পকেটের হিসেব ছাড়া পকেট খসাকে যদি ব্যবসা বলে, তবে হ্যাঁ আমরা ব্যবসা করছি। ভবিষ্যতেও করবো। ইনশাল্লাহ।
আমি আজও বুঝি না, এসব মানুষ কোন চালের ভাত খেয়ে এমন নোংরা বিবেকের জন্ম দেয়! চিন্তা করতেই ঘেন্না লাগে আমার। ছিঃ !!

প্রতিবছর দেশের সবকটা বিভাগীয় শহরে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব করে CFS অসংখ্য প্রতিভাবান তরুণ নির্মাতা বের করে আনছে, তৈরি করছে সুস্থ ঘরানার দর্শক। আমাদের একজন তরুণ নির্মাতার ৫ বছর আগের কাজ আর এখনকার কাজের পার্থক্যটা দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একটি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র মান বদলানো। বস্তাপচা প্রেমের এক কাহিনী, বিদেশী ছবির নকল, অযোগ্য শিল্পী- এসব অপবাদ খেয়ালিপনা মুছে ফেলা। এদেশে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪ টি ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়! শাকিব খান, অপু বিশ্বাস এক বছরে অর্ধশতাধিক ছবি করেছেন! How is it possible??? এটা পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না কোন দুঃখে?? ঠিক বুঝতে পারছি না।

একজন পরিচালক যদি জন্মের পর থেকে ছবি বানানো শুরু করে তবেও এমনটা সম্ভব কিনা আমি সন্দিহান।

But reality is it’s happening.

মজা করে প্রায়ই একটা কথা বলি। আলোচিত হওয়া যায় দুইভাবে।

১। খুব ভালো কিছু করে, বিখ্যাত হয়ে। কিংবা,

২। জঘন্য কিছু করে, কুখ্যাত হয়ে।

কথাটা বাস্তবেও সত্য। তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদ, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী প্রমুখ বিখ্যাত পরিচালক। কিন্তু হায় এফডিসি পরিচালক! আপনারা এতটাই শীর্ষমানের যে আপনাদের নাম পর্যন্ত আমার জানা নেই, জানার আগ্রহ নেই। প্রশ্ন রাখছি, কেন??

With due respect, জনাব সোহানুর রহমান, যেই আপনি কিনা বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়ক সালমান শাহ এর আবির্ভাবক, জনপ্রিয় ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এর নির্মাতা! সেই আপনি আজ মুখ থুবড়ে পড়লেন?? হতাশা! কেজি কেজি হতাশা!

তর্কে বিতর্কে জড়াতে বা গড়াতে চাই না। ছোট্ট মানুষ আমি। মুখ ছোট, মাথা ছোট। কিন্তু স্বপ্ন ও সাহস অনেক বড়। আমাদের এই গোটা পরিবারের সকলেরই একই অবস্থা। আমরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান প্রেক্ষাপট বদলাতে চাই। চাই বললে ভুল হবে, বলতে হবে ‘বদলাবো’। এমন একটা পরিবেশ গড়বো যেখানে নোংরামি থাকবে না, কলংক থাকবে না, শিল্পীদের কদর থাকবে, যোগ্য ও নতুনরা সুযোগ পাবে, তারুণ্য থাকবে, চাঞ্চল্য থাকবে। কোন মেয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা দিতে চাইলে বাবা মা অনিরাপদ বোধ করবে না। এমন ইন্ডাস্ট্রি গড়ার স্বপ্ন দেখি।

CFS আমাদের এই স্বপ্ন গড়ার প্ল্যাটফর্ম। পুরো নাম চিলদ্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ। স্লোগান- ফ্রেমে ফ্রেমে আগামি স্বপ্ন (Future In Frames)। এখানে আমরা সবাই শিশু।

#বিবেকহীনরা নাক শিটকিয়ে, মুখ ভেঙচিয়ে বলে- রক্ত গরম তো তাই ভুলভাল বকছে। যাও গিয়ে পড়তে বস। তুমি ছাত্র ভালো। ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। ওসব দেশ টেশ গড়বে নেতারা। আর চলচ্চিত্র?? ছিঃ নষ্ট হবে নাকি??

(জোরে দীর্ঘশ্বাস) তাদের উদ্দেশ্যে বলি, এদেশে আপনি জন্মেছেন বলে লাভের লাভ তো কিছু হয়ইনি, উল্টো বিরাট ক্ষতি হয়েছে। যে দেশের শতকরা ৫ ভাগ লোক মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছে লাল সবুজ একটা পতাকা স্বাধীন আকাশে উড়বে বলে, আপনি আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাব বলে, আপনার আমার মা বোনের সম্ভ্রম হারাতে হবে না বলে সেই দেশে খেয়ে পড়ে বিন্দুমাত্র কর্তব্য জ্ঞান নেই আপনার?? কোন চিন্তা নাই?? শ্রদ্ধাবোধ নাই??
বলতে কষ্ট হয়, কিন্তু এরকম নিরুৎসাহ মূলক এবং বাধাদানকারী কথা শুনলে তাকে আমার কেমন যেন নিমকহারাম রাজাকার টাইপ মনে হয়।

সব মিলিয়ে দেশটা আজ এমন মাঝিবিহীন নৌকার মত দিক্বিদিক হারিয়ে যেদিক খুশি সেদিক যেতে থাকলে তার জন্য শুধুমাত্র দায়ী এরকম অসাড় মানুষ। যারা কখনোই ন্যায় নীতির জন্য আওয়াজ তুলতে পারে না, ভালোয় উৎসাহ দিতে জানে না। দেশকে কিছু দিতে পারেনা। শুধু নিয়েই যায়। এরা দেশের বোঝা।

আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে?

দেশের চেহারা পাল্টাতে হলে সব্বাইকে মাঠে নামতে হবে। সৃজনশীল কাজ করতে হবে। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। আমরাও পিছিয়ে নেই, কিন্তু আরও আগাতে হবে। যারা শুধু হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না মিলায় তারা হলেন বুড়ো। তাই তাদের কাছে কিছু আশা করা মানে অরন্যে রোদন। যা করার আমাদের তরুণদেরই করতে হবে। আমরাই পারি খারাপের সাথে তাল মিলিয়ে ধ্বংস হতে, আমরাই পারি সব প্রতিবন্ধকতাকে লাথি মেরে গুড়িয়ে দিতে। Now the choice is yours…..

চলচ্চিত্র একটি অনন্য মাধ্যম, প্রতিবাদী ভাষা। যার মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করি সুখ দুঃখ, চাওয়া পাওয়া, তুলে ধরি ইতিহাস, আবেদন। সেই অঙ্গন টাকেই নতুন করে গড়তে হবে। যারা আমার মত স্বপ্নবাজ, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে চলচ্চিত্র দিয়ে বিশ্বের মুখে বাংলাদেশ কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে চাও তারা এগিয়ে এসো। CFS is open to all. এখানে আসতে হলে কোন link ধরতে হয়না, লাইন ঘাঁট ধরতে হয় না, ঘুষ দিতে হয়না। শুধু কাজ দেখাতে হয়, তোমার প্রতিভা তুলে ধরতে হয়। ব্যাস!
স্বপ্নগুলো যদি একদিনেই পূরণ হত তাহলে কতই না ভালো হত! তবে শুরু হয়ে গেছে। এখন সময় কথা বলবে। তারুণ্যের নেতিবাচক প্রভাব, ক্ষমতা তো প্রতিদিনই দেখি। এবার না হয় ইতিবাচক ক্ষমতা দেখানো যাক। আমরা সবাই মিলে এক সূর্য। জ্বলন্ত লাভার টকটকে লাল সূর্য। একটু একটু করে উঠছি। পুরোটা উঠার অপেক্ষা।

জয়তু চলচ্চিত্র! জয়তু তারুণ্য! জয়তু CFS!