ছোটবেলার সেই মিনা ও রাজুর কথা মনে আছে? গ্রামের সেই সাহসী ও বুদ্ধিমতী মেয়ে মিনা ও তার দুষ্টু ছোট ভাই রাজু; কি হেসে-খেলেই না দিন পার করত! কত বন্ধু ও বান্ধবী ছিল তাদের!
কিন্তু, যদি এমন হত, যে মিনা ও রাজু আমাদের মতই এমনি একটি ডিজিটাল যুগ এ, এমন একটি শহরে বসবাস করছে, তাদের জীবনধারাও আমাদের মত, তাহলে কেমন হত ব্যাপারটা?! তাহলে চল, মিনা ও রাজুর মধ্যে একদিনের একটি কথোপকথন শোনা যাক!
মিনাঃ উফফ! আমার খুব বিরক্ত লাগছে! কিচ্ছু করার মত পাচ্ছি না।
রাজুঃ কেন, তোমার ফোন আছে না? ফোনে কত কিছুই তো করতে পারো। মুভি দেখ, ইউটিউব দেখ, ফেসবুক চালাও, বন্ধুদের সাথে চ্যাট কর। কত কিছুই তো করা যায় আজকাল ফোন এ!
মিনাঃ হুম, ফোন এ অনেক কিছুই করা যায় ঠিক, কিন্তু রাজু, আমি না এসব করে করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আর ভাল লাগে না এসব!
রাজুঃ তাহলে চল, তুমি আর আমি মিলে একটা মুভি দেখি! ইশ! কত সুন্দর সুন্দর মুভিই না বের হয়েছে সাম্প্রতিক! খুব মজা হবে! বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দিব আর মুভি দেখব!
মিনাঃ মুভি দেখবি?! এই রাজু, আমার একটা আইডিয়া এসেছে। ঐদিন ফেসবুক এ দেখলাম ‘চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি’ দ্বারা আয়োজিত ‘১৩তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচিত্র উৎসব’ জানুয়ারি মাসের ২৪-৩১ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে। বাসায় বসে মুভি না দেখে চল না ঐখানে যাই!
রাজুঃ শিশু চলচিত্র উৎসব! ঐখানে গিয়েই বা কি হবে? বাংলাদেশে কোন ভালো মুভি হয় না! সব থার্ডক্লাশ লেভেল এর! এর থেকে ইন্টারনেটে কত ভালো ভালো মুভি আছে!
মিনাঃ তুই ভুল ভাবছিস রাজু। ইন্টারনেট এর মুভি আর চলচিত্র উৎসব এর মুভি এক হয় না। আর তোকে কে বলেছে বাংলাদেশে ভালো মুভি বানানো হয় না? তুই তো এই দেশ সম্পর্কে কিছুই জানিস না!শোন রাজু, এই শিশু চলচিত্র উৎসবটা আন্তর্জাতিক পর্যায় এর। এইখানে দেশ-বিদেশ থেকে ভালো ভালো ফিল্মমেকাররা আসে। ইন্টারনেট এ যেসব মুভি বের হয় ঐগুলো তো আমরা অন্য কারো কাছ থেকে স্পয়লার হিসেবে জেনে যাই, আর কত মুভি-ক্লিপ থাকে ইন্টারনেট এ। তখন আর ঐ মুভি দেখতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু এই চলচিত্র উৎসব এ যেসব মুভি আসে সেগুলো সব অদেখা মুভি, কিন্তু সবগুলোই খুব ভালো মানের হয়।
রাজুঃ সেটা নাহয় বুঝলাম, অদেখা অজানা সুন্দর মুভি দেখায় তারা। কিন্তু শুধু কয়েকটা ভালো মুভি দেখার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন আছে? ঘরে বসেই দেখা যায় না?
মিনাঃ ওহ রাজু! তুই দিনদিন এমন ঘরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছিস কেন? একটা কথা চিন্তা কর, আমাদের জীবনে বিনোদনের কি আছে? মোবাইল, ইন্টারনেট এইত, আমাদের বিনোদনের জগত তো শুধু এই ছোট যন্ত্রটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু বাইরেরও একটা জগত আছে, সেইখানে কত ধরনের মানুষ, বিষয়, কত কিছু দেখা যায়, শেখা যায়! এভাবে সবসময় ঘরে বসে থাকলে মানুষ একসময় বিষণ্ণতায় ভুগে, কিন্তু বাইরে একটা উৎসবে যোগ দিলে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে পরিচয় হয়, যোগাযোগ হয়। তখন মনও ভালো হয়ে যায়। এই উৎসবে গেলে আমরা জানতে পারব বাংলাদেশের মানুষদেরও কত ট্যালেন্ট আছে! শুধু বিদেশীরা না, বাংলাদেশিরাও পারে ভালো ফিল্ম বানাতে! আর এইখানে শুধু ফিল্মই দেখায় না, আমাদের বিভিন্ন ওয়ার্কশপও করায়। কারো যদি ফিল্মমেকিং এ আগ্রহ থাকে তারা এই উৎসব এর মাধ্যমে প্রফেশনাল সব ফিল্মমেকারদের কাছ থেকে মিল্মমেকিং এর বিভিন্ন পরামর্শ পায়। পরবর্তীতে দেখা যায় এদের মধ্য থেকেই একজন হয়ে উঠে দক্ষ ফিল্মমেকার। চিন্তা করে দেখ রাজু, আমরা মুভিও দেখলাম, ওয়ার্কশপও করলাম, এরপর একটা মুভিও বানালাম নিজেরা মিলে। এমন হতে পারে না পরবর্তীতে আমরাই হয়ে গেলাম দেশের একজন বিখ্যাত ফিল্মমেকার, যার কাছে বিখ্যাত ফিল্মস্টাররা এসে আবেদন জানায় অভিনয় করার জন্য! চিন্তা করে দেখ রাজু!