বন্ধু মুখরের কল্যাণে আজকে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজটা করছি। হুম, আজকে অমি লিখতে বসেছি এবং যা আমি একেবারেই ভালো পারিনা। যদিও এর আগেও কিছুটা লিখেছি কিন্তু সেগুলো ছিল গল্প, স্ক্রিপ্ট যার কিনা সবই শুটিং এর সাথে সম্পৃক্ত এবং অবশ্যই সেগুলো মোটেও খুব ভালো হয়নি । ওই হিসেবেও আমার একটু হলেও লিখতে পারার কথা, কিন্তু নিজের অনুভূতি লিখে প্রকাশ করাটা অনেক ভিন্ন এবং খুব কঠিন একটা কাজ আর আজকে আমাকে তাই করতে হচ্ছে। এমনকি লেখার অভ্যাস আমার এতটাই কম যে কবে থেকে পি.সি. তে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ইনস্টল করা নেই সেটাও আমি জানিনা আর তাই বাধ্য হয়ে Google translator-এ লিখতে বসলাম, অদ্ভুত অনুভূতি! লেখার প্রতি আমার এমন ভয় এবং গুছিয়ে লিখতে না পারার কারণে আমার খুব একটা ফেইসবুকেও স্ট্যাটাস দেয়া হয়না। এইদিক থেকে আমি বন্ধু মাসুদের অনেক বড় ভক্ত, ওর অনেক কঠিন বিষয়গুলো এত সহজভাবে লিখতে পারাটা আমার খুবই পছন্দ।
যাই হোক, আজকে আমি দুটো বিষয় নিয়ে লেখার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করব। সেগুলো হচ্ছে তৃতীয় আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উত্সবে আমার বানানো প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য পাওয়া পুরস্কার নিয়ে আমার অনুভূতি এবং সিএফএস এর সাথে ঠিক তখন থেকে এখন পর্যন্ত চলতে থাকা আমার সম্পর্কের অনুভূতি নিয়ে। দুটোই অনুভূতিজনিত ব্যাপার বলে কাজটা আরো বেশি কঠিন।
আমার বানানো প্রথম শর্ট ফিল্ম এর নাম “দ্যা টেনিস বল”। ২০১০ সালে আমি এই শর্ট ফিল্মটার জন্য উত্সবে বিশেষ পুরস্কার পাই। সেটা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের মুহূর্ত ছিল। আমি তখন এতটাই ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম যে জাফর ইকবাল স্যার, মোরশেদুল ইসলাম স্যার এর মত এত বড় মাপের মানুষদের সামনে বলে ফেলেছিলাম “এবার আমার স্বপ্ন অস্কার”। যা চিন্তা করলে এখন আমি লজ্জায় চেহারা লুকানোর জায়গা খুঁজে পাইনা। যদিও কথাটা আমি বিশ্বাস করেই বলেছিলাম এবং এখনও বিশ্বাস করি। কিন্তু তারপরও ওনাদের সামনে কথাটা বলার কারণে এখন বেশ লজ্জাই লাগে আর তাছাড়া কিছু কিছু স্বপ্ন নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখাটাই উত্তম, অন্যরকম একটা আনন্দ কাজ করে।
আমার কাছে মনে হয় সেদিনের ওই পুরস্কারটি আমাকে ফিল্মকে আরও বেশি ভালবাসতে, ফিল্ম নিয়ে আরও বেশি চিন্তা করতে এবং আরও বড় স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেছে। অনেক বেশি সাহায্য করেছে। সেই পুরস্কারটি হাতে পাওয়ার পরের অনুভুতি বলে বা লিখে প্রকাশ করাটা সম্ভব না। এটা মনে হয় যারা পুরস্কার পেয়েছে সবার ক্ষেত্রেই একই রকম। তাছাড়া “টেনিস বল” এর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি মুহূর্তই আমার জীবনের অত্যন্ত প্রিয়, হয়তবা ওটা আমার প্রথম কাজ ছিল বলেই। আমার এখনো মনে পরে ঐদিন পুরস্কার পাবার পর আমার এক বড় ভাই খুশি হয়ে আমাকে এক কেজি রস মালাই কিনে দিয়েছিল, এর আগে পরে বহুবার রস মালাই খেয়েছি কিন্তু ঐদিন এর মত মজা আর তৃপ্তি বোধহয় আর কখনই পাইনি।
যখন আমি টেনিস বল এর শুটিং শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম তখন প্রায় রাত ৩টা বাজে, রাস্তায় আশে পাশে আর কেউ ছিলনা। কেন যেন তখন আমার চোখ দিয়ে দর দর করে পানি পড়ছিল। আসলেই আমি জানিনা তখন কেন চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল, ৩ দিন গাধার মত খেটে অবশষে শুটিং শেষ করতে পারার জন্য নাকি শুধুমাত্র আনন্দ থেকে!! তবে এতটুকু আমি নিশ্চিত জানি ওই মুহূর্তটা আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত। “টেনিস বল” এর প্রতি আমার আবেগটা এতটাই বেশি যে এখন লিখতে বসে আমার মনে হচ্ছে অনেক কিছু লেখার আছে কিন্তু কিছুই লিখতে পারছিনা তাই আর নিজের উপর অত জোর দিয়ে লাভ নেই। পুরস্কার পাওয়ার অনুভুতি নিয়ে লেখাটা এখানেই থামালাম।
এবার আশা যাক ঐদিন “টেনিস বল” এর জন্য আমি পুরস্কারের চেয়েও অনেক বড় যেই জিনিসটি পেয়েছি সেটার দিকে। আর সেটা অবস্যই সিএফএস। সিএফএস এর প্রতি আমার ভালোবাসাটা সত্যিই অনেক বেশি। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো উত্সবেই আমার কাজে সেই ব্যাপারটি একেবারেই প্রমাণিত হয়নি। শুধুমাত্র শেষ উত্সবে আমি ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করে ছিলাম এবং সেখানেও আমি অনেক ফাঁকিবাজি করেছি (আশা করি মুন্নী খালা লেখাটা পড়বেন না)।
সিএফএস থেকে আমি সবচেয় বড় যেই জিনিসটা পেয়েছি তা হচ্ছে কয়েকজন অনেক বেশি ভালো বন্ধু। আর তাদের সবাইকেই আমি পেয়েছি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজারে আমাদেরকে নিয়ে সিএফএস এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে। এই ওয়ার্কশপের আগে আমার একটা ধারণা ছিল আমার মানুষের সাথে মিশতে একটু সময় লাগে এবং এজন্যই আমি অন্যান্য উত্সব গুলোতে খুব বেশি ইনভলভ হতে পারিনি কিন্তু সেটা একেবারেই মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যায় এই ওয়ার্কশপে। আমি বেশ কয়েকজন আজীবন নিশ্চিত বন্ধু পেয়েছি এখানে যারা বয়সে আমার সমান, বড় এবং ছোট। যাদের সাথে আমি ফিল্ম সহ আরো নানা বিষয় নিয়ে খুব খোলা মনে আনন্দের সাথে আড্ডা দিতে পারি। এই মানুষগুলোর সাথে পরিচয় হবার পর আমার একটি অত্যন্ত ভুল ধারণা পুরোপুরি ভুল প্রমাণ হয়। আগে আমি মনে করতাম আমি খুবই talented কিন্তু এই মানুষগুলোর সাথে পরিচিত হবার পর আমি realize করলাম আমি খুব একটা talented না ওটা আসলেই আমার ভুল ধারণা ছিল। তবে আমি অনেক আগ্রহী একটা মানুষ। ফিল্ম এর প্রতি আমার আগ্রহ এবং স্বপ্নটা অনেক বেশি।
সিএফএস থেকে প্রতি উত্সবেই আমার মনে হয় সবাই অনেকগুলো স্বপ্ন আর অনেকগুলো বন্ধু নিয়ে যায়। সিএফএস এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেটার কারণে অনেকেই এখন স্বপ্ন দেখছে বড় হয়ে ফিল্ম মেকার হওয়ার, যা একদিন আমাদের দেশের জন্য অনেক বিশাল একটা ব্যাপার হবে। সিএফএস এ এত এত তরুণ প্রতিভাবান ফিল্ম মেকার দেখে আমার মাঝে মাঝেই নিজেকে ফিল্ম মেকার মনে হয় কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি সেই স্বপ্নটা পূরণ হতে এখনও অনেক অনেক দূর বাকি। তবে সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি এবং আজীবন কাজ করে যাব। আশা করি সেই চেষ্টায় সবাইকেই সাথে পাব।
নিজের অনুভুতির এত বিশাল বহিঃপ্রকাশ আপাতত এখানেই থামাচ্ছি।