২৪ জানুয়ারী, ২০১৫। টানা ৭ বারের উৎসব আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারেও আয়োজিত হয়ে চলেছে ৮ম আন্তর্জাতিক শিশু চলচিত্র উৎসব। উৎসব প্রতিবারেই যেন নতুনের ছোঁয়া লাভ করছে , তবে এবারের মাত্রাটা যেন একটু বেশিই বলা চলে। উৎসবে ছবি জমা নেয়ার প্রযুক্তি থেকে শুরু করে উৎসব পেছনের মানুষগুলো অনেক কিছুই পেয়েছে এবার নতুনের ছোয়া!
আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের শুরু হয় ২৪ জানুয়ারী। কিন্তু এর ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ কিন্তু শুরু হয়ে যায় ৭ম আন্তর্জাতিক শিশু চলচিত্র উৎসবের শেষ হওয়ার সাথে সাথেই। উৎসবের আয়োজনের সাথে যারা জড়িত অর্থাৎ চিল্ড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকদের গত ১ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এবারের উৎসব। আন্তর্জাতিক শিশু চলচিত্র উৎসব বাংলাদেশে শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া একমাত্র চলচিত্র উৎসব। তাই এই উৎসবকে ঘিরে অনেক শিশু কিশোরদের মাঝেই বছরজুড়ে থাকে উত্তেজনা। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই উৎসবে যারা ছবি বানায় তারা যেমন শিশু কিশোর , এমনকি যারা এই ছবিগুলোর বিচার করবে তারাও কিন্তু শিশু কিশোর!!!
বরাবরের মত এবারের উৎসবের উদ্বোধন হয় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বিকাল ৪টায় শাহবাগের কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর প্রাঙ্গনে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, চিল্ড্রেন ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও চেয়ারম্যান মুস্তফা মনোয়ারসহ আরো অনেক বরেণ্য ব্যাক্তির উপস্থিতিতে মহা উৎসব শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। প্রথমেই উৎসব সঙ্গীত ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন চিল্ড্রেন ফিল্ম সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা। এরপর অতিথিরা শান্তির প্রতীক পায়রা আর উৎসবের প্রতীক সম্বলিত বেলুন আকাশে উড়িয়ে দেন। এরপর জাতীয় পতাকা ও উৎসব পতাকা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব।
এর পরেই পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান মিলানায়তনে অতিথিরা প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। আসন গ্রহণের পর উপস্থিত অতিথিরা স্বাগত বক্তব্য দেন। অতিথিদের বক্তব্যের পরেই শুরু হয় উৎসবের মূল পর্ব। দেখানো হয় ৭ম আন্তর্জাতিক শিশু চলচিত্র উৎসবের উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র, দেখানো হয় উৎসবের লোগো ফিল্ম, তরূন নির্মাতা রায়হান আহম্মেদের চলচিত্র “ডেডলাইন”। সর্বশেষে উদ্বোধনী চলচিত্র হিসেবে দেখানো হয় জার্মানী পরিচালক টমাস হেইম্যানের ছবি “লোলা অন দ্যা পি”।
এইতো ছিলো উৎসবের উদ্বোধনের কথা, চলুন এবার শুনি উৎসবের কথা। এবারের উৎসব চলছে একই সাথে দুটি বিভাগীয় শহর ঢাকা ও সিলেটে। সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও এর প্রভাব পড়েনি উৎসবের ভেন্যুগুলোতে। বরাবরের মত এবারেও উৎসবে মানুষের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মত। উৎসবের প্রথম দিন উৎসবের মূল ভেন্যু পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান মিলনায়তনে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়, অন্যান্য ভেন্যু গুলোতেও মানুষের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মত। চলচিত্র দেখতে আসা মানুষের মুখভঙ্গিই যেন বলে দিচ্ছিলো উৎসবের প্রতি তাদের ভালোলাগাটুকু। এমন অনেক দর্শককেই দেখা গেছে , যারা একটি চলচিত্র দেখবেন বলে এসেছিলেন, কিন্তু ২টো বা ৩ টা চলচিত্র শেষ হয়ার আগে উঠতে পারেননি!
উৎসব নিয়ে উত্তেজনা শুধু দর্শকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা যেন ছড়িয়ে পড়েছে সব তরুন নির্মাতাদের মধ্যে। উৎসবের জন্য ছবি বানিয়ে জমা দিয়ে উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছেন প্রায় ৬৬ জন ডেলিগেট যারা সারা দেশ থেকে এই উৎসবে এসেছেন। সবার মুখেই ছিলো উৎসব নিয়ে আনন্দের ছোঁয়া। তাদের উৎসবের প্রথম দিনের শুরু হয় ডেলিগেট ওরিয়েন্টেসনের মাধ্যমে যেখানে উৎসব পরিচালক রায়ীদ মোর্শেদ এই উৎসব নিয়ে তাদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি উৎসবের কম্পিটিসন, জুরী বোর্ড, কম্পিটিসন ক্রাইটেরিয়া সহ আরো অনেক বিষয় ডেলিগেটদের সামনে তুলে ধরেন। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে এরপরে প্রদর্শিত হয় তাদের বানানো চলচিত্রের কিছু চলচিত্র।
এবারের উৎসব প্রাঙ্গনে বরাবরের মতই রয়েছে ৩ টি স্টল – ডেলিগেটস স্টল (যারা ছবি নির্মান করে এই উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছেন, তাদের জন্য) , সেলস স্টল ( উৎসব উপলক্ষ্যে তৈরি আকর্ষনীয় সব উপাদান কিনতে পারবেন এই স্টল থেকে। এবারে প্রথমবারের মত পাওয়া যাচ্ছে ৩ রকমের ব্যাজ, থাকছে ব্যাগ , পোস্টার , স্যুভেনিয়র , শিডিওল , টি শার্ট ) আর রয়েছে মিডিয়া এন্ড ইনফরমেশন স্টল ( উৎসবে আসা বিভিন্ন মিডিয়া ও সাধারন মানুষদের তথ্য দেয়ার কাজ করা হয় এই স্টল থেকে। সাংবাদিকদের জন্য প্রেস রিলিজ তৈরি করা, তা ঠিক সময়ে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া, সাংবাদিকদের প্রস্নের উত্তর দেয়া সবই করেন এই স্টলে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা ) আর সবকিছু সমন্বয় করার জন্য উৎসব অফিস তো রয়েছেই।
এবারেই প্রথমবারের মত ছবি দেখার সাথে সাথে দর্শকদের জন্য পপকর্ন খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে চিল্ড্রেন ফিল্ম সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা। থাকছে উৎসবে প্রথমবারের মত বায়োস্কোপ দেখার সুযোগ। শহরের যান্ত্রিকতায় কিছুক্ষনের জন্য হলেও হাড়িয়ে যাওয়া যায় এই বায়োস্কোপে। আরো থাকছে প্রজেকসন সুবিধা যেখানে সবাই উৎসবের জন্য বানানো বিশেষ কিছু দৃশ্য দেখতে পারবে।
এবারে উৎসবের পরিচালক থেকে শুরু করে সব পর্যায়েই অনেক নতুন মুখ দেখা গিয়েছে। মুখগুলো নতুন হলেও তারা চিল্ড্রেন ফিল্ম সোসাইটির অনেক পুরোনো মুখ। নতুন দায়িত্ব কাধে চেপে তারা কাজ করছে জোরেশোরে। মনেই হচ্ছে না , এবারই যেন তারা এই রকম দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মত কাজ করছেন। এবার যেন নতুনেরই জয়গান গাচ্ছে সবাই।
মাত্র ২ টা দিন শেষ হলো, আরো ৫টা দিন বাকী , উৎসব আরো জমে উঠার বাকী, আরো অনেক মজার কিছু বাকী, সব কিছু দেখতে আর নির্মল আনন্দ উপোভোগ করতে আজই চলে আসুন ৮ম আন্তর্জাতিক শিশু চলচিত্র উৎসবে। উৎসবের বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন ফেসবুকে উৎসবের অফিশিয়াল ইভেন্ট পেইজে। উৎসবের বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন, উৎসবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। উৎসব দেখার আমন্ত্রন জানাচ্ছি সবাইকে।
This blog is ভালোবাসা Made by CFS , Made for CFS